মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনসগুলো সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। বাড়তি দামেও মিলছে না এয়ারটিকিট। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন সিলেট বিভাগের অন্তত ২০ হাজার প্রবাসী। তারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে পারছেন না।

জানা গেছে, দুবাই ও আবুধাবি রুটে আগে ভাড়া ছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে এয়ারলাইনসগুলো ভাড়া বাড়িয়ে ৮৭ হাজার টাকা করেছে। মাস্কাট রুটের ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকা এবং সৌদি আরবের ভাড়া ৪২ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া, বুস্টার ডোজ ছাড়া ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা অনুমোদন বৃদ্ধিসহ কয়েকটি কারণে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য রুটে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। ফের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই আগেভাগে ফিরতে চাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যে। আর এই সুযোগে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো সিন্ডিকেট করে যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। চাহিদার তুলনায় ফ্লাইট কম থাকায় এয়ারলাইনসগুলো ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

দুবাই প্রবাসী জকিগঞ্জের হাসিব আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রায় তিন মাস আগে তিনি দেশে এসেছেন। আগামী ২৩ ডিসেম্বর তার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে। এর আগেই তাকে যে কোনো উপায়ে দুবাই যেতে হবে। কিন্তু তিনি টিকিট পাচ্ছেন না। বিয়ানীবাজারের দুবাগের সৌদি আরব প্রবাসী আশফাক আহমদ জানান, তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় যাবেন। আগে যেখানে ভাড়া ৪০-৪৫ হাজার টাকা ছিল, সেখানে তিনি টিকিট কেটেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা দিয়ে। ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাড়তি মূল্যে টিকিট কিনতে হয়েছে।

এদিকে সৌদি আরবের এয়ারটিকিটের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী ছাড়াও বিপাকে পড়েছেন ওমরাহ যাত্রীরা। অনেকেই ওমরাহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও এয়ারটিকিটের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সৌদি আরব যেতে পারছেন না। আটাব নেতারা জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। কিন্তু বর্তমানে এয়ারলাইনসগুলো প্রতিদিন ৩ হাজারের বেশি যাত্রী বহন করতে পারছে না। ফলে ২ হাজার যাত্রীর টিকিটের সংকট লেগেই আছে।

এই অবস্থায় টিকিট সংকট নিরসনে সম্প্রতি আটাবের পক্ষ থেকে চারটি প্রস্তাব দিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আটাব সিলেট জোনের সাবেক সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বলেন, ‘হঠাৎ করে গত এক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে এয়ারলাইনসের ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোর সিন্ডিকেট। অটোমেশন পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি করা গেলে এই সংকট দূর করা যাবে।’

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল কবির চৌধুরী শীরু বলেন, ‘ওমিক্রনের সংক্রমণ ও ভিসা অনুমোদন বৃদ্ধির কারণে দেশের মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। এই সুযোগে এয়ারলাইনসগুলো সিন্ডিকেট করে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। প্রতিদিন আমাদের কাছে অসংখ্য মানুষ আসছেন টিকিটের জন্য। অতিরিক্ত দাম দিয়েও টিকিট সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’